আড়াইহাজার প্রতিদিন ডেক্স:-
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে চুরি ও ডাকাতির এক প্রকার হিড়িক চলছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়িতে চুরি- ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। চোর-ডাকাতদের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন সাধারন মানুষ। সর্বশেষ ৩০ জুলাই গভীর রাতে উপজেলার কামরানীরচর বাজারে ‘এস.ডি মেডিসিন’ নামে একটি ফার্মেসীতে চালের টিন কেটে চুরির ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় এক লাখ টাকার মালামাল লুট হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্ত শ্রী উজান সূত্রধর। গতকাল রোববার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পুলিশ পরির্দশন করেন। উজান সূত্রধর বলেন, রাত ১০টার দিকে তিনি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বাড়িতে চলে যান। সকালে দোকানে এসে দেখতে পান সবকিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। পরে ঘরের চালের টিন কাটা দেখতে পেয়ে তিনি প্রতিষ্ঠানে চুরির বিষয়টি নিশ্চিত হন। খবর পেয়ে আড়াইহাজার থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছে। কিন্তু কাউকে আটক করতে পারেনি। আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক হাওলাদার বলেন, খবর পেয়ে সকালে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছিল। চোরদের গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রসঙ্গত. এর আগে ২৯ জুলাই দিবাগত রাতে আড়াইহাজার পৌরসভার স্থানীয় ঝাউগড়া কামিনীতলা নামক এলাকায় সাত দিন মজুরের বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাত দলের সদস্যরা প্রতিটি ঘরের দরজা ভেঙে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ ও অন্যান্য মালামালসহ প্রায় দুই লাখ টাকার মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় ডাকাতদের প্রতিরোধের চেষ্টা করলে অন্তত ১০ জনকে পিটিয়ে ও কোপিয়ে রক্তাক্ত আহত করা হয়েছে। এ সময় টাকা দিতে দেরি হওয়ায় এক মাস বয়সি এক ঘুমন্ত শিশুর গলায় ছুরি ঠেকিয়ে পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে ডাকাতরা। ক্ষতিগ্রস্ত নারী রতœা বেগম বলেন, ‘আমি পিঠা তৈরি করে বিক্রি করে কোনমতে সংসার চালাচ্ছি। পিঠা বিক্রির টাকাগুলো রাতে ডাকাতরা নিয়ে গেছে। বাড়িতে বেড়াতে আসা আমার মেয়ে ও মেয়ের জামাতাকেও মারধরপিট করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকেও বেশ কিছু টাকা নিয়ে গেছে।’ ভুক্তভোগী ইব্রাহিম জানান, ‘আমার পরিবারের সকল সদস্যের হাত, পা বেঁধে ফেলে রাখা হয়। পরে আমাকে রড দিয়ে পিটিয়ে ১৪ হাজার টাকা লুট করা হয়েছে। এসময় টাকা দিতে দেরি হওয়ায় এক মাসের শিশু ওসমান মোল্লা জিসানকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।’ ক্ষতিগ্রস্ত আয়নালের স্ত্রী বলেন, আমাদের ঘর থেকে ডাকাতরা ২ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। টাকা দিতে দেরি হওয়ায় আমাকে মারধর করা হয়েছে। আমার শিশু সন্তান ইউসুফকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ডাকাতরা। সনিয়া বেগম জানান, আমার ঘরের দরজার ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে আমাকে মারধর করা হয়েছে। তারা ঘরে থাকা টাকা ও স্বর্ণলঙ্কার নিয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেকের অভিযোগ ডাকাতরা প্রতিটি বাড়িতেই অন্তত ঘন্টাব্যাপী তান্ডব চালায়। একইভাবে নুরে আলম, মোতালিব, জাকির হোসেন ও সুলতান ফকিরের বাড়িতে ডাকাতরা হানা দেয়। ২৪ জুলাই একরাতে স্থানীয় দুই বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতদল অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুই বাড়ি থেকে নগদ ও স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় ৬০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে। দুপ্তারা ইউনিয়নের কালিবাড়ি হাটখোলাপাড়া ও পাঁচগাও দেওয়ানপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচগাও দেওয়ানপাড়া এলাকার ঠিকাদার হারুন অর রশীদ খানের বাড়িতে রাত পৌনে চারটার দিকে ১২-১৫ জনের মুখোশ পরিহিত একদল ডাকাত দ্বিতীয় তলা ভবনের একটি কক্ষের জানালার গ্রিল কেটে ভিতরে প্রবেশ করে। পরে গৃহকর্তার সদ্য বিবাহিত কন্যাকে জিম্মি করে গৃহকর্তার কক্ষে প্রবেশ করে সকলের হাত-পা বেঁধে তারা প্রায় ঘন্টাব্যাপী বিভিন্ন কক্ষের আসবাবপত্রসহ আলমারী তছনছ করে ফেলে। এ সময় তারা প্রায় ৪৪ ভরি ওজনের বিভিন্ন স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ৪ হাজার (ইউএস) ডলার ও ৪ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। একই রাতে স্থানীয় কালিবাড়ি বাজার সংলগ্ন হাটখোলাপাড়া এলাকায় হাজী বাবুল ভূঁইয়ার বাড়িতেও ডাকাতরা হানা দেয়। এই বাড়ি থেকে প্রায় ২০ভরি ওজনের বিভিন্ন স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ৫ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করা হয়েছিল। স্থানীয়রা জানান, বেশ কিছুদিন যাবত আড়াইহাজার থানা এলাকায় চুরি-ডাকাতির ঘটনা কম ছিল। বর্তমানে চুরি-ডাকাতি বেড়ে গেছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রন করতে পারছে না পুলিশ। এতে রাতের আধারে ক্রমেই বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীসহ বসত বাড়িতে লোকজনের মধ্যে বাড়ছে ডাকাত আতংক।