আড়াইহাজার প্রতিদিন ডেক্স :-
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মা ও তার শিশু সন্তানকে হত্যাকারীর সর্ব্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের দাবীতে মানববন্ধ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নবাসী। গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় উজানগোপিন্দী পশ্চিমপাড়া এলাকায় হত্যাকান্ডের শিকার রাজিয়া সুলতানা কাকলীর বাড়ির পাশে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। তাতে নেতৃত্ব দেন নাজমুল কাজী। এ সময় গ্রেপ্তার হওয়া সাদেকুর সাদীর সর্ব্বোচ্চ শাস্তির দাবীতে বক্তব্য রাখেন, কাকলীর চাচা শ্বশুর সাইফউদ্দিন কাজী সালফু। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত সাদীর সর্ব্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে। সে এলাকায় সব সময় জুয়া খেলে ও নেশা করে বেড়াত। সে একজন খারাপ প্রকৃতির ব্যক্তি ছিল। সে কাকলী ও তার সন্তানকে নৃশংসভাবে জবাই করে হত্যা করেছে। স্কুল শিক্ষক আলাউদ্দিন বলেন, তালহা মনোহরদী মডেল স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। সে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রছিল। প্রতিটি পরীক্ষায় সে ভালো রেজান্ট করতো। তিনি বলেন,৮টি বিষয়ের মধ্যে তালহা মৃত্যুর আগে বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র,ইংরেজী প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র ও গণিত পরীক্ষা শেষ করেছিল। বাকী তিন বিষয়ের পরীক্ষা ঈদের পর দেওয়ার কথা ছিল। তালহা যে বিষয়গুলোতে পরীক্ষা দিয়েছে তাতে সে প্রতিটি বিষয়ে ৯৫এর উপরে পেয়েছে। তার খাতা দেখতে গিয়ে স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকরাও চোখের পানি ফেলেন। এসময় তিনি তালহা ও তার মায়ের হত্যাকারীর সর্ব্বোচ্চ শাস্তির দাবী করেন। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া স্থানীয় নার্গিস আক্তার বলেন, আমিও একজন মা। আমারও সন্তান রয়েছে। আমি বুঝি সন্তান হারানোর ব্যদনা। তিনি বলেন, তালহা শান্ত প্রকৃতির একজন শিশু ছিল। সে প্রতিদিন আমার ছেলের সঙ্গে খেলাধুলা করতো। তাকে আমি অনেক আদর করতাম। আজ সে নেই এটা মেনে নিতে পারছি না। ঘুমন্ত তালহাকে নৃসংশভাবে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। এটা ভাবতেই শরীর শিউরে উঠে। আমি হত্যাকারীর সর্ব্বোচ্চ শাস্তির দাবী করছি। এদিকে তালহার নানী মামলার বাদী তাসলিমা বেগম বলেন, আমার মেয়ে ও তার শিশু সন্তান হত্যাকারীর সর্ব্বোচ্চ শাস্তির দাবী করছি। বুধবার এলাকার শতশত নারী পুরুষ ও শিশু মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন। সেখানে অনেক নারী ও শিশুদের কান্নায় ভেঙ্গে পড়তে দেভা গেছে। এলাকার সকলেই হত্যাকারী সাদিকুরের সর্ব্বোচ্চ শান্তি মৃত্যুদন্ডের দাবী করেন।
উল্লেখ্য ঘাতক সাদিকুর সাদি আইপিএল জুয়া খেলে বেশ কিছু টাকা ঋনগ্রস্ত হয়ে পড়ে। পাওনাদারদের চাপে সে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ২জুলাই শনিবার সন্ধ্যায় তার কর্মস্থল সাকিব নিটওয়্যার থেকে ফিরে সে নিহতের বাড়ির পাশে হাটাহাটি করে বিভিন্ন চিন্তা করতে থাকে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিহত কাকলীর বাড়িতে গিয়ে তাকে ভাবী সম্বোধন করে ডাকাডাকি করে। কাকলী দরজার সামনে এলে মায়ের জন্য বেøন্ডার নিতে এসেছে বলে জানায়। ঐ সময় কাকলী কলাপসিবল গেইট খুললে সাদিকুর ঘরে ঢোকেন । ঘরে ঢুকে শিশু ছেলে তালহাকে ঘুমভাব দেখে কাকলীর কাছে ১০ হাজার টাকা চান সাদিকুর। ঐ সময় কাকলী তার কাছে কোন টাকা নাই জানান। এতে সাদিকুর বিশ্বাস না করায় কাকলী তার আলমারী খুলে তাকে দেখায়। ঐ সময় সাদিকুর আলমারীতে বেশ কিছু স্বর্ণালংকার দেখতে পান। তখন সে লোভে পড়ে কাকলীকে চেয়ারে বসিয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর কাকলীর মাথায় ইস্ত্রী দিয়ে আঘাত করে। পরে সে হত্যা নিশ্চিত করতে কাকলীর রান্নাঘর হতে বটি এনে কাকলীর গলা কাটেন। পরে সে আলমারী থেকে স্বর্ণালংকার দুটি আংটি, দুটি চেইন ও এক জোড়া কানের দুল নিয়ে পাশের রুমে গিয়ে শিশু তালহাকে জবাই করে হত্যা করে।
পিবিআই আসামীকে গ্রেপ্তার করার পর তার স্বীকারোক্তি মতে একটি আংটি,একটি চেইন ও এক জোড়া কানের দুল সাদিকুরের শোবার ঘরের বিছানার তোষকের নিচ থেকে উদ্ধার করে এবং একটি চেইন একটি আংটি রূপগঞ্জ উপজেলার ডারগাঁ এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপালের কাছ থেকে জব্দ করা হয়। এগুলো সাদিকুরের মায়ের স্বর্ণ বলে ১৭ হাজার টাকায় গোপালের কাছে বন্ধক রাখে সাদিকুর। এছাড়াও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত বটি,ইস্ত্রী ও রক্তমাখা ওড়না উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর সাদিকুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট কাওসার আলমের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।